সোমবার, নভেম্বর ১০, ২০২৫
 শিরোনাম
ডিএমপির ৫ এডিসিকে বদলি করা হয়েছে রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকলেন তারেক রহমান কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন রোধে ৬২৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত সেবাগ্রহীতার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করলে নেয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ শহীদ মিনারে তৃতীয় দিনেও চলছে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি হাজিরা দিতে এসে খুন হলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন জাতীয় ঈদগাহে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা অতীতের কলঙ্ক ঘোচাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই: ইসি আনোয়ারুল চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে বিদেশি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন: নৌপরিবহন উপদেষ্টা প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বিচার বিভাগে: প্রধান বিচারপতি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বিচার বিভাগে: প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগে যে কোনো প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
সারাদেশের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের দেয়া অভিভাষণে তিনি আজ এ কথা বলেন। 
প্রধান বিচারপতি অভিভাষণে বিচার বিভাগের জন্য একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেন। ১৭ পৃষ্ঠায় দেয়া অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন বিষয় ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। 
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। 
প্রধান বিচারপতি শ্রদ্ধার সাথে ২০২৪ সালের গণবিপ্লবে আত্মদানকারী শহিদদের স্মরণ করেন, যাঁরা জাতিকে এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। 
তিনি বলেন, যতদিন বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন শহিদ আবু সাঈদ, মীর মাহবুবুর রহমান মুগ্ধ, বাবার কোলে নিহত ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ, ওয়াসিম আকরামসহ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সকল শহিদকে এদেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য অকুতোভয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। 
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের পথ পরিক্রমা পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাব বাংলার ইতিহাস মূলত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস। বাংলার মানুষের লালিত শাশ^ত ন্যায়বোধের চেতনা বিভিন্ন সময়ে শাসন, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিরতিহীন নানা সংগ্রামে অনুরণিত হয়েছে; যার চূড়ান্ত পরিণতিতে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আসে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থার এক যুগ-সন্ধিক্ষণে আমাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। আমি বিশ^াস করি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের জন্য যে কঠিন বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবের কারণে আমার উপর অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্ব সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আপনারা।’
তিনি বলেন,‘বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ন্যায় বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। শঠতা, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে মানুষের আস্থা ও বিশ^াস। তাই নতুন এই বাংলাদেশে আমরা এমন একটি বিচার বিভাগ গড়তে চাই যেটি বিচার এবং সততা ও অধিকারবোধ এর নিশ্চয়তার একটি নিরাপদ দূর্গে পরিণত হবে।’ 
প্রধান বিচারপতি বলেন, কেন বিচার বিভাগের ছন্দপতন হয়েছিল, কী কী বিষয় এর জন্য দায়ী। এই পথে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারপর আমাদের কাছে কী কী জনসম্পদ ও অবকাঠামোগত সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে তা নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে এবং এই জাতীয় দুর্বিপাক থেকে উত্তরণপূর্বক একটি জনমুখী আইন ব্যবস্থা ও বিচার কাঠামো বির্নিমাণে করণীয় সম্পর্কে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে। 
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়া। এর কুফল আমরা সবাই ভোগ করেছিলাম গত দেড় দশক ধরে। এছাড়াও আছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, মামলা অনুপাতে বিচারকের নিদারুণ স্বল্পতা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাবের ঘাটতি, আদালতগুলোর অবকাঠামোগত সংকট, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন যৌক্তিক
ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকা, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ, স্থায়ীকরণ ও উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে কোন আইন না থাকা ও প্রথাগত জ্যেষ্ঠতার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ইত্যাদি বিষয়গুলো ; যা আমাদের বার বার পিছিয়ে দিয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থার কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে, স্বল্প সময় ও খরচে বিরোধের মীমাংসা নিশ্চিত করে জনগণ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেয়া। এ জন্য বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে পৃথক ও স্বাধীন করা সবচেয়ে জরুরি। কেননা শাসকের আইন নয়,বরং আইনের শাসন নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব।