জেলায় সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার মতো একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজির উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খলা প্রভাবিত হয়েছে। ফলে সকল প্রকারের সবজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষক, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, রংপুর কৃষি অঞ্চলে কয়েক মাস আগে দীর্ঘ খরা ও সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণের ফলে বন্যা দেখা দেওয়ায় নদ-নদী বেষ্টিত নিচু চর এলাকায় স্বল্পমেয়াদি সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া সরদারপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া ও রবিউল ইসলাম বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে জানান, তারা সাধারণত তাদের কৃষি জমিতে ধনে, করলা, মুলা, বেগুন, মরিচ, আলু ও কাকরোল চাষ করে থাকেন।
বেলাল বলেন, ‘সাম্প্রতিক বর্ষণে বেগুন, মরিচ ও ধনিয়ার ক্রমবর্ধমান চারা সম্পূর্ণভাবে এবং মূলা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর আগে খরায় করলা, কাকরোল ও বেগুনের বাড়ন্ত গাছের ক্ষতি হওয়ায় ফলন কম হয়েছিল।’
মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী ও আশরাফুল আলম জানান, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে মরিচ, করলা ও বেগুন সম্পূর্ণরূপে ক্ষতি হয়েছে এবং দুধকুশি, ঝিঙ্গা, কাকরোল, বরবটি, পটল, মরিচ, অফ-সিজন বাঁধাকপি, ফুলকপি ও শাকসবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
স্থানীয় ফড়িয়া আবু বকর, শহিদুল ইসলাম ও সোলায়মান আলী জানান, তারা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লাভে বিক্রি করে থাকেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট, সদর উপজেলার পালিচড়া ও রংপুর সিটি পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় উৎপাদন কম হওয়ায়, তাদের আড়তে দৈনিক সবজির সরবরাহ দুই থেকে তিন গুণ কমে গেছে।
রংপুর সিটি পাইকারি বাজারের বীথি বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বাসস’কে জানান, ‘ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে সবজির অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দাম বেড়ে গেছে।’
এর আগে তিনি তার পাইকারি দোকানে নিয়ে আসা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি কেজিতে এক থেকে দুই টাকা হারে কমিশন নিয়ে কৃষক ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতেন। এ দোকান থেকে দিনে পাঁচ থেকে সাত টন সবজি বিক্রি হতো।
দেলোয়ার বলেন, ‘বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় তার পাইকারি দোকানে প্রতিদিনের সবজির সরবরাহ দুই থেকে তিন টনে নেমে গেছে।’
