মঙ্গলবার, নভেম্বর ১১, ২০২৫
 শিরোনাম
ডিএমপির ৫ এডিসিকে বদলি করা হয়েছে রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকলেন তারেক রহমান কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন রোধে ৬২৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত সেবাগ্রহীতার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করলে নেয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ শহীদ মিনারে তৃতীয় দিনেও চলছে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি হাজিরা দিতে এসে খুন হলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন জাতীয় ঈদগাহে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা অতীতের কলঙ্ক ঘোচাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই: ইসি আনোয়ারুল চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে বিদেশি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন: নৌপরিবহন উপদেষ্টা প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

কুষ্টিয়ার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারি বাড়ির সংস্কারে প্রাণ ফিরেছে

কুষ্টিয়ার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারি বাড়ির সংস্কারে প্রাণ ফিরেছে

কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির নাম শোনেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রবীন্দ্রভক্ত, অনুরাগী ও ইতিহাসবিদদের কাছে এ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ‘কাচারি বাড়ি’ (তহসিল খানা) যুগের পর যুগ অযতœ অবহেলায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কারের ছোঁয়ায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিশ্বকবির ১৩২ বছরের স্মৃতি বিজড়িত এ কাচারি বাড়িটি।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাচারি বাড়িটি (তহসিল খানা) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কশবা গ্রামে অবস্থিত। রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি থেকে ৫৫০ মিটার এগিয়ে গেলে একটি তেমাথা সংলগ্ন পাকা রাস্তার উত্তর পাশে পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এ কাচারি বাড়ি।

কাচারি বাড়িটি (তহসিল খানা) আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত একটি স্থাপনা। দক্ষিণমুখী করে নির্মিত দুই তলা বিশিষ্ট এ স্থাপনাটির দেয়ালসহ দৈর্ঘ্য ১৯.৫০ মিটার ও প্রস্থ ৯ মিটার। স্থাপনার দেওয়ালগুলো প্রায় এক মিটার চওড়া। এটির নিচ তলায় চারটি কক্ষ এবং সামনে লম্বা একটি বারান্দা রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে একাধিক প্রবেশপথ ও জানালা রয়েছে। প্রবেশপথ ও জানালাগুলোতে সেগমেন্টাল খিলানের প্রতিফলন দেখা যায়।

নিচতলার বারান্দার সামনে সমদূরত্বে স্থাপিত স্তম্ভের সারি রয়েছে। জোড়ায় জোড়ায় স্থাপিত স্তম্ভগুলোতে টুস্কান স্তম্ভের প্রতিফলন দেখা যায়। নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য পশ্চিম পাশের দেওয়ালের সঙ্গে লাগোয়া বাইরের দিকে একটি সিঁড়ি রয়েছে। দ্বিতীয় তলাটি প্রায় নিচ তলার আদলে নির্মিত। তবে দ্বিতীয় তলার সামনের বারান্দাটি ছাদবিহীন এবং কোনো স্তম্ভ নেই। এ বারান্দাটির সামনে স্বল্প উচ্চতার প্রাচীর রয়েছে। সাধারণ স্থাপত্যিক বৈশিষ্টের এ স্থাপনাটির নির্মাণ উপকরণ হিসেবে পোড়া মাটির ইট, চুন, বালি, লোহা ও কাঠের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। ছাদে লোহার বীম ও কাঠের বর্গার ব্যবহার করা হয়েছে।

জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ অঞ্চলের জমিদারি পান। ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কচারি বাড়িতে (তহসিল খানায়) বসেই জমিদারি পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এ কাচারি বাড়িতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের (তহসিল অফিস) কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে কাচারি বাড়িতে গিয়ে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ চোখে পড়ে। পড়ন্ত বিকেলের আলোর রেখা যেন আছড়ে পড়ছে কাচারি বাড়ির বারান্দায়। এতে লাল রঙা দ্বিতল বাড়িটি যেন আরও জীবন্ত হয়ে উঠছে স্মৃতির পাতায়। বাড়ির সামনের পাশে খোলা মাঠে খেলে বেড়াচ্ছে রাজহাঁসের দল। কাচারি বাড়ির বারান্দা থেকে সামনে তাকালে চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ। বাড়ির আঙিনায় শতবর্ষী কিছু গাছ যেন মৃতপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কাস্টাডিয়ান আল আমীন বাসসকে জানান, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে। চুন-সুরকি খসে পড়া দেওয়ালে প্রলেপ লাগানো হয়েছে। ভবনের কিছু অংশের ছাদ ধসে গিয়েছিল, সেসব ঠিকঠাক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কাচারি বাড়িটির সামনের বিশাল জমিটি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জমিটি চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। যদি পাওয়া যায় তাহলে পর্যটকদের জন্য বাড়িটি আরও নতুন রূপে সাজানো সম্ভব হবে।