তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তিনটি আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আজ এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে নাগরিক সমাজের পক্ষে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে গতকাল সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রিভিউ আবেদন করেন। তিনটি রিভিউ আবেদনের ওপর একসাথে শুনানি হবে।
বিএনপির পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনে বিএনপির পক্ষে ১০টি যুক্তি পেশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তির মধ্যে রয়েছে-আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পুর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করা একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা। উন্মুক্ত আদালতে দেয়া রায় ছিল একরকম, পরবর্তীতে প্রকাশিত রায়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বিষয়টি নিয়ে একটি ফৌজদারী মামলাও চলমান রয়েছে বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পূর্বেই সংবিধান সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী সরকার। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংসদে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। আদালতে ঘোষিত রায়ের সাথে প্রকাশিত রায় ভিন্ন ছিল। যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে করেন এডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
এই সিনিয়র এডভোকেট বলেন, গনতন্ত্র এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন জমজ সন্তানের মত একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তিতে আরো বলা হয়, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। যুক্তিতে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশ্লিষ্ট মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভ অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এডভোকেট জয়নুল আবেদীন গ্রাউন্ডগুলো গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আদালত রিভিউ মঞ্জুর করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশংসিত হয়েছিল।
ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই ওই নির্বাচনগুলো মেনে নেয়। ওই সময় জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে অধিবেশন কার্যক্রম প্রাণবন্ত ছিল। ২০০৭ সালের এক এগারো পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচন বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য ছিল। যদিও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগ জানায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। এক এগারোর কুশীলবরা ওই নির্বাচন পরিচালনা করেছিল।
