রবিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৫
 শিরোনাম
ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় লাখো মানুষ অংশগ্রহণ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক বীর উত্তম এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার গভীর শোক সুদানে শহীদ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের লাশ দেশে ফিরেছে সংসদ ভবনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন হাদির জানাজাকে ঘিরে রাজধানীতে জোরদার নিরাপত্তা মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের ইন্তেকাল লন্ডনে ফিরে গেছেন জুবাইদা রহমান হোয়াটসঅ্যাপে সরাসরি অভিযোগ নেবে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি : শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে

স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি : শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে

আধুনিক যুগ প্রযুক্তির। এর সঙ্গে মানুষের সখ্য দিনদিনই নিবিড় হচ্ছে। শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না কোনভাবেই। কিন্তু প্রযুক্তির ইতিবাচক যেমন নেতিবাচক দিকও যথেষ্ট।

আর কোমলমতি শিশুরা এর নেতিবাচক প্রভাবেরই শিকার হচ্ছে বেশি। এই যেমন মোবাইল ফোন। এর ব্যবহারে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা সবচেয়ে বেশি। 

মোবাইল ফোন একদিকে যেমন শিশুর স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে খেলার মাঠ ও স্বজনদের কাছ থেকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

শিশুরা গৃহবন্দী ও প্রাণচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ছে। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। 

সম্প্রতি সুইডেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব তরুণ মোবাইলফোন ব্যবহার করে এবং যাদের বয়স ২০ বছরের কম, অন্যদের তুলনায় তাদের প্রায় ৫ গুণ বেশি আশংকা থাকে ব্রেন ক্যানসারের৷ অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি দুই মিনিট স্থায়ী মোবাইল কল শিশুদের মস্তিষ্কে যে হাইপার অ্যাকটিভিটি সৃষ্টি করে, তা পরবর্তী এক ঘন্টা পর্যন্ত মস্তিষ্কে বিরাজ করে।

এর ফলে শিশুরা নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে ব্রেন ক্যান্সার, ব্রেইন টিউমারের ঝুঁকি অনেকগুণ বেশি। কারণ, বড়দের চেয়ে শিশুদের রেডিয়েশন শোষণ শতকরা ৬০ ভাগ বেশি। আর যেহেতু শিশুদের চামড়া ও হাঁড় নরম, তাই এদের ক্যান্সার ঝুঁকিও বেশি। এ ছাড়াও অন্যান্য সমস্যার মধ্যে ক্লাস পারফরমেন্স কমে যাওয়া, খিঁচুনি, নির্ঘুমতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

আমরা জানি, মোবাইল ফোন রেডিয়েশন ছড়ায়। রেডিয়েশন প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, শিশুদের জন্য তা আরো মারাত্মক ক্ষতিকর, যা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যহত করে। সারা পৃথিবীতেই এখন শিশুরা প্রায় বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করে থাকে। দিনের পর দিন এ হার দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে শিগগিরই হয়তো সারাবিশ্বের শিশুরা একটি মহামারী রোগের শিকার হতে পারে এবং যা হতে পারে প্রাণঘাতি মস্তিষ্কের ক্যান্সার। গবেষণা থেকে আরো বেরিয়ে এসেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুদের শ্রবণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়।

বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন, রেডিয়েশন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের প্রায় ৩০ ভাগ ক্যান্সারই হয়ে থাকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই রেডিয়েশনের কারণে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গবেষণা থেকে আরো বেরিয়ে এসেছে, শিশুরা যারা ম্যাগনেটিক (চুম্বক) ফিল্ডস-এর কাছাকাছি অবস্থান করে, ক্রমেই তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে এবং যারা পাওয়ার লাইনের (যা কি-না ইএমএফ উৎপন্ন করে) কাছাকাছি অবস্থান করে তারা লিওকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়৷ এমনকি যারা মোবাইল অথবা রেডিও টাওয়ারের ১২শ’ ফিটের মধ্যে বসবাস করে তাদের মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি। আমাদের দেশে বেশিরভাগ টাওয়ারগুলো গড়ে উঠছে স্কুলের ছাদ, বসত বাড়ির ছাদ এবং শপিংমলের ছাদের উপরে। এসব স্থানে স্থাপিত টাওয়ারগুলো নিরাপদ দূরত্বে খুব কমই দেখা যায়।

শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে। অভিভাবকরা জরুরি প্রয়োজনে তাদের সন্তানদের খোঁজ নেয়ার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারে বাধা দেন না। জরুরি প্রয়োজনের কথা বাদ দিলে লক্ষ্য করা গেছে, শুধু বাইরে নয়, ঘরেও শিশুরা সারাদিন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এককালে যে শিশুটি সারাদিন ঘরে ভাইবোন, বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খেলাধুলা ও গল্প করে কাটাতো, কিংবা ক্লাসের বাইরে কোন বই পড়ে সময় কাটাতো, সেখানে এখন তারা মোবাইল ফোনে গেম খেলা থেকে শুরু করে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অযাচিত সাইটগুলো দেখে সময় নষ্ট করছে। মনে রাখা জরুরি শিশু শিশুই, তারা কখনোই বড়দের মতো শারীরিক সক্ষমতার অধিকারী নয়। তাই একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার পরিবারে শিশুবান্ধব কিছু নিয়মনীতি আপনাকেই তৈরি করতে হবে। আপনি কি আপনার শিশুর মাথাটাকে একটি ওভেনের মধ্যে রাখতে চান? নিশ্চয়ই না। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে, আপনার অজান্তেই আপনার শিশুর মাথাটি ওভেনে রেখে দেয়ার মতোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মোবাইল ফোন থেকে ক্রমাগতভাবে নির্গত রেডিয়েশন দ্বারা৷ রেডিয়েশনের ভেতরে যে ইলেকট্রমেগনেটিক ফিল্ড (ইএমএফ) রয়েছে তা সহজেই শিশুর মস্তিষ্কে ঢুকে পড়তে সক্ষম। আর এই ইলেকট্রমেগনেটিক ফিল্ড বা সংক্ষেপে ইএমএফ শিশুর মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

শুধুমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণেই নয়, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক গেইম, বৈদ্যুতিক পাওয়ার লাইন এবং ওয়াইফাই ব্যবহারও শিশুদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। কানাডার টরেন্টো স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ লার্নিং ডিসাবেলিটিস স্কুলে ইএমএফ হ্রাস করার জন্য ইএমএফ ফিল্টার স্থাপন করে এক গবেষণা করে দেখা গেছে যে, সেখানকার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি উদ্যমী এবং সতেজ। এই হার শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি। এটা চমকে দেয়ার মতোই সত্য বটে! 

তারপরও বলা যায়, প্রযুক্তিকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তবে প্রযুক্তির সহায়তা নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। যেমন মোবাইল বা কর্ডলেস ফোনের স্পিকার অন করে কথা বলা। মোবাইলে কথা বলার পরিবর্তে টেক্সট বা এসএমএস-এর মাধ্যমে যোগাযোগ বেশি করা। রাতে ঘুমাবার সময় মোবাইলের মনিটর ঘুমন্ত শিশুর কাছ থেকে অন্তত ৬ ফিট দূরত্বে রাখা। জরুরি প্রয়োজনে শিশুকে মোবাইল ব্যবহার সীমিত করা। রান্নাঘরে মাইক্রো ওভেনে রান্নার সময় শিশুদের দূরে রাখা।এমনকি ইস্ত্রি ব্যবহারের সময়ও শিশুদের দূরে রাখতে হবে। কারণ, ওভেন এবং ইস্ত্রি উভয় থেকেই ব্যবহারের সময় ইএমএফ নির্গত হতে থাকে, যা বড়দের চেয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অধিক ক্ষতিকর।

শুধু জন্ম নেয়া শিশুর জন্য নয়, মাতৃগর্ভের শিশুটির জন্যও গর্ভবতী মায়েদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাত্রাতিরিক্ত বৈদ্যুতিক দূষণের ফলে গর্ভে থাকা শিশুটিও বিকলাঙ্গ হতে পারে। এমনকি তার শ্রবণশক্তিও ব্যহত হতে পারে এবং শিশুর নার্ভ সিস্টেম গ্রোয়িংয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। পরিণামে এটি মিস ক্যারেজ ও সন্তান প্রসবে সমস্যা দেখা দেয়ার মতো ভয়াবহ সব পরিস্থিতির তৈরি করতে পারে।

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তার কে আর জামান বলেন, ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে অভিভাবক ও শিশুদের রক্ষার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত করা ছাড়াও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুকনো বরইয়ে শুকনো ইউনিক এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা বৈদ্যুতিক দূষণের ফলে নির্গত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রেডিয়েশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।এ ছাড়াও প্রতিদিন ৪-৫টি বাদাম খাওয়া যেতে পারে, খাবারে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ আলুবোখারা যোগ করা যেতে পারে। বাঁধাকপি এবং ফুলকপিও রেডিয়েশন রোধ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও নিয়মিত ২ চামচ মধু এবং সপ্তাহে ৩-৪ দিন ঘোল বা মাঠা খেলে রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷

অভিভাবকরা সতর্ক হলে এবং শিশুদের প্রতি যথাযথ যত্ন নিলেই আগামীতে আমরা সমৃদ্ধ জাতি গঠনে পরিপূর্ণ সুস্থ প্রজন্ম আশা করতে পারি, যারা আমাদের দেশকে সত্যিকার সোনার বাংলা গড়তে সহায়ক হতে পারে।