জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিসংঘের করিডোর দেওয়া নিয়ে যে গুজব উঠেছে, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনও কথা হয়নি, কারও সঙ্গে কথা হবে না।
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, করিডোরের বিষয়টা বুঝতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ইমারজেন্সি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। যেহেতু আরাকানে সাহায্য সহযোগিতা অন্যান্য সাপ্লাই রুট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না, জাতিসংঘ আমাদের এইটুকুই বললো যে, কাছেই যেহেতু বর্ডার, তাদের সাহায্য করতে, যাতে ত্রাণগুলো ওপারে নিয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ রাখাইনে তার নিজস্ব সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাবে। আপনারা জাতিসংঘকে জিজ্ঞেস করেন, প্রমাণ পাবেন। আমরা করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে কোনও ধরনের কথা বলিনি এবং বলবো না। আরাকানের যে অবস্থা তাতে করিডোরের কোনও প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, যে প্রয়োজনীয়তা আছে সেটা হচ্ছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার। যখন মিয়ানমারে ভূমিকম্প হলো আমরা কিন্তু তাদের আবেদনের অপেক্ষা করিনি। আমরা ত্রাণ পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা একটা মানবিক অবস্থান। আমাদের ধারণা এই কাজটি করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং আমরা সেই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। যতদিন আরাকান অস্থিতিশীল থাকবে আমরা প্রত্যাবাসনের কথা বলতেই পারবো না। আর তাহলে তো প্রত্যাবাসন কৌশল নিয়েও কথা বলতে পারবো না। অনেকেই বলছেন করিডোর নিয়ে আলাপ করছেন, আমাদের জানাননি । অস্তিত্ববিহীন জিনিস নিয়ে কী করে আলাপ করবো, যার অস্তিত্ব নেই সেই বিষয়ে আলাপ কী করে হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের ওপর কারও চাপ নেই। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ যারাই আছেন অংশীজন, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাড়াহুড়োর কোনও কথা নেই। হিসাব আমাদের সোজা, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে হবে এবং ফেরত গিয়ে আবার যেন ফেরত না চলে আসে। টেকসই প্রত্যাবাসন হতে হবে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা করিডোর শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন, করেই কিন্তু বলেছেন ‘পাথওয়ে’। সেটা স্লিপ অব টাং ছিল। কথাবার্তা অনেক সময় স্লিপ হতে পারে, কিন্তু উনি কারেক্ট করেছিলেন। উনি সেই কথা আর কখনই বলেননি।
ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে, এই প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসংঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদকপাচার হচ্ছে কিনা, অন্য কিছু হচ্ছে কিনা, সেটা আমরা দেখবো। দ্ইু পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিক্ট কমলেই শুধু আমরা যাবো।
ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই পক্ষ, সব পক্ষ যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা সবার সঙ্গে বসে সেটা ঠিক করবো। এটা কেবলমাত্র সরকারের নয়, সব অংশীজনের সঙ্গে বসে আমরা সেটা ঠিক করবো। এখনও সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি।
করিডোর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনও ফাঁকফোকর নেই।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই। আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, এখনও পর্যন্ত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তারপর থেকে এই ইস্যুটিকে আমরা আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় পুনরায় তুলে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এর আগে সাত বছর এই ইস্যুটি প্রায় অপসৃত হয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক গাজা এবং ইউক্রেন ইস্যুতে রোহিঙ্গা ইস্যু আরও পেছনে পড়ে গিয়েছিল। আপনাদের হয়তো মনে আছে, গত সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন এবং জাতিসংঘকে এই ইস্যুতে একটি সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে সাড়া দিয়েছে।
