বুধবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

বন্যার আঘাতে বাড়ছে মৃত্যু-ক্ষতি

বন্যার আঘাতে বাড়ছে মৃত্যু-ক্ষতি

মাসের শুরুতে পূর্বাভাস থাকার পরও মাসের শেষভাগে দেশের ১১টি জেলায় ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ বন্যার আঘাতে বিপর্যয়ের চিত্র ধারণা চেয়েও বেশি, যা নিয়ে উপদ্রুত অঞ্চলের পাশাপাশি সারা দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

শুক্রবার পর্যন্ত বন্যায় নতুন করে তিনটি জেলাসহ ১১টি জেলা প্লাবিত হওয়ার তথ্য দিয়ে সরকার জানাচ্ছে, ১৫ মৃত্যুসহ প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

বহু ঘরবাড়ি-অবকাঠামো ধসে যাওয়া, বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের ফসলের ক্ষতি এবং ভৌত ও ভার্চুয়াল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার মধ্যে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষের কষ্ট ও হাহাকারের তথ্য আসছে।


কিছু এলাকায় পানি নামা শুরু হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিরও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার রাতে সর্বশেষ সার্বিক প্রতিবেদনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলেছে, শুক্রবার নতুন করে লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার ও সিলেট জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস থেকেও মিলছে না ‘সুখবর’, তারা জানাচ্ছে নতুন করে ভারি বা অতিভারি বৃষ্টিপাত না হলেও আপাতত চলমান ধারার ‘বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা নেই’। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠন বন্যা উপদ্রুত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।


ঘরবাড়ি থেকে ফসলের ক্ষেত- সর্বত্র বন্যার আঘাত, দিশেহারা শত শত গ্রামের মানুষ, উৎকণ্ঠায় কৃষক ও বর্গা চাষি। জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাও তাদের ভাবাচ্ছে।

আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু রাস্তা ও অবকাঠামাতে গরু-ছাগল, হাসমুরগির সঙ্গে ‘দলা পাঁকিয়ে’ বসবাস করতে হচ্ছে বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষের। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগও নেই। চারদিকে থই থই পানি অথচ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছে বানভাসি মানুষ।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাগাদি সোবহানপুর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, “সেচ প্রকল্প এলাকায় অনেক কৃষক বর্গা চাষি। অন্যের জমি চাষ করে তাদের সংসার চলে। টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন পানির নিচে। পানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে বীজ রোপণ করতে পারেননি। এমন ক্ষতি আমরা ধারণাও করতে পারিনি।”

বন্যার পানিতে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি।
বন্যার পানিতে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি।


বুধবার মধ্যরাতে হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নারগিস আক্তারের।

ক্ষয়ক্ষতির এমন ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে কোনো ধারণা ছিল নাগিস আক্তারের। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো জিনিসপত্রই রক্ষা করতে পারি নাই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। পানিতে ঘরের জায়গার মাটি সরে যাওয়ায় নতুন করে এখন ঘরও বানাতে পারব না।”

ঘরে বানের পানি ওঠায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মো. আব্দুল হাই বলেন, “বাড়িঘরে পানি ওঠার পাশাপাশি আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছি।”

প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ আক্রান্ত, ১৫ জনের মৃত্যু

বর্ষা মৌসুম শেষে ভাদ্রের শুরুতে দেশ যে আরেক দফা বন্যার কবলে পড়তে পারে, অগাস্টের শুরুর দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসেই সেটি বলেছিল। কিন্তু সেই বন্যা যে এমন রুদ্ররূপে আবির্ভূত হবে, তা কল্পনাও করেনি ফেনীসহ আক্রান্ত অন্যান্য জেলার মানুষ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অতিভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এই বন্যায় দুই দিনের ব্যবধানে দেশের অন্তত ১১টি জেলা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এসব জেলায় প্রায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯টি পরিবারের মানুষ এখন, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন মানুষ।

বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।

কিন্তু মুহুরী নদীর বানে ফেনী জেলা যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে, ইতিহাসে এমন নজির আর নেই। সম্পদহানির সঙ্গে ফেনীর চার উপজেলার চার লাখের বেশি মানুষ এখন প্রাণ বাঁচানো নিয়ে লড়াই করছে।