রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি আগামী ৫ মার্চ।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য আজ এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার জারিন রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান। আর এই মামলায় ইন্টাভেনর হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে সাঁতারকূল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাতদিন পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। এরপর আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে রুল জারি করে আয়ানের পরিবারকে কেন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চান আদালত।
হাইকোর্টের সে আদেশ অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক ডা. পরিমল কুমার পালের সই করা ১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনকে এক ধরনের আইওয়াশ বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদনের সুপারিশকে হাস্যকর উল্লেখ করেন উচ্চ আদালত। এরপর হাইকোর্ট নতুন করে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ৫ সদস্য বিশিষ্ট সে কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার এ বি এম মাকসুদুল আলমকে। সচিব হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।
হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত এই বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি রিপোর্ট নথিভুক্ত করে আদালত রুল শুনানির দিন ধার্য করেছেন। হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত মতামত ও সিদ্ধান্ত অংশে বলা হয়, বিশ্লেষণের আলোকে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির সদস্যরা মনে করেন যে, শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর জন্য সাঁতারকূলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়ী। কেননা, এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান। এ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না থাকায় এটি বৈধভাবে চিকিৎসা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, অস্ত্রোপচারের পূর্বে নেবুলাইজ করা এবং অস্ত্রোপচার পরবর্তী ঝুঁকি সম্পর্কে চিকিৎসকদের টিমের উচিত ছিল শিশু আয়ানের পিতা বা অভিভাবকদের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া।
তৃতীয়ত, অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সৈয়দ সাব্বির আহম্মদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল এবং তাকে সহযোগিতা করার জন্য সহকারী প্রয়োজন ছিল।
চতুর্থত, কমিটি মনে করে যে, সাঁতারকূলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার পরিবেশ যেমন ছিল না, তেমনি অস্ত্রোপচার পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল না। উপরন্তু, গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে আয়ানের পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ডাক্তার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ব্যবহার ছিল রূঢ়। সবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পাঁচ লাখ সাতাত্তর হাজার দু’শ সাতান্ন টাকার বিল পরিশোধ করে আয়ানের মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলা ছিল অমানবিক।
