রবিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৫

দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে স্বর্ণের ভরি

দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে স্বর্ণের ভরি

বিশ্ব বাজারে হু হু করে বাড়ছে স্বর্ণের দাম, যার সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ে চলেছে মূল্যবান এ ধাতুটি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আগামীতে স্বর্ণের ভরি বেড়ে কত হবে- সেই প্রশ্নটিই এখন জনমনে।

আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটের হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ প্রতি আউন্স (২ দশমিক ৪৩ ভরি) স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮০০ ডলার, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারে সর্বশেষ ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯০ টাকা, দেশের ইতিহাসেও যা সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) তথ্যমতে, ২০০০ সালে দেশে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি ছিল ৬ হাজার ৯০০ টাকা। ২০১০ সালে তার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায়। এক দশক পর ২০২০ সালে ধাপে ধাপে স্বর্ণের দাম বেড়ে হয় প্রতি ভরি ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা।

গত ১৫ বছরে দেশে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে করোনা ও করোনা পরবর্তী সময় মিলিয়ে গত ৪ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ভরিতে ৭৫ হাজার টাকা।

দেশের বাজারে সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে স্বর্ণের ভরি ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সে হিসাবে দেড় বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ভরিতে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

যে হারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে, তাতে করে ২০২৬ সালের শেষের দিকে স্বর্ণের ভরি দুই লাখের কাছকাছি পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে প্রায় পাঁচ দশক ধরে স্বর্ণের ব্যবসা করেন গোবিন্দ হালদার। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে দেশে গিনি সোনার দাম ছিল দেড় শ’ টাকা। বর্তমান বাজারে দেড় শ’ টাকা তুচ্ছ মনে হলেও ওই সময়েও মানুষের অভিযোগ ছিল, স্বর্ণের দাম নাগালের বাইরে। তবে বর্তমানে যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে করে বছর খানেকের মধ্যে ভরিপ্রতি ২ লাখ টাকাও হয়ে যেতে পারে।’

তবে সাধারণ মানুষের ভাষ্যমতে, দাম যতই নাগালের বাইরে থাকুক, স্বর্ণের চাহিদা কোনোদিন কমেনি।

দেশে স্বর্ণের দামের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘স্বর্ণের ভরি ২০২৬ সালের দিকে ২ লাখের কাছাকাছি পৌঁছাবে কিনা সেটা হলফ করে বলা যায় না। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে স্বর্ণ মজুত করছে, তাতে দাম ২ লাখ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’

তবে এটি বাজারের ওপরই ছেড়ে দেয়া ভালো বলে মনে করেন তিনি।

২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়, আর কমানো হয় ২৭ বার। চলতি বছর এখন পর্যন্ত চারবার স্বর্ণের সমন্বয় করে শীর্ষে অবস্থান করছেন মূল্যবান এ ধাতুটির দাম।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের পর থেকে ডলারের হিসাবে প্রতি বছর স্বর্ণের দাম ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। দাম বাড়তে থাকায় এবং স্বর্ণকে মুদ্রায় রূপান্তর সহজ হওয়ায় দামের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদা।