শনিবার, নভেম্বর ৮, ২০২৫

নেত্রকোণায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো হাজংদের দেউলী উৎসব

নেত্রকোণায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো হাজংদের দেউলী উৎসব

নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় দিনব্যাপী হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দেউলী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির আয়োজনে উপজেলার শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বাসস ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ তার বক্তব্যে বলেন, দেউলী উৎসবের মতো অনেক উৎসব বর্তমান সরকার ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যার যার উৎসব পালন করছেন এবং সেগুলোর মধ্যে কোনো রাজনীতিকরণ হচ্ছে না, সবাই যার যার ঐতিহ্য পালন করতে পারছেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে এটা আমাদের একটা বড় প্রাপ্তি, রাজনীতিকরণের বাইরে এসে আমরা আমাদের আয়োজনগুলো, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো পালন করতে পারছি। আমরা মনে করি যে, এই ধারা অব্যাহত থাকা দরকার। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকার গঠন করবেন তারা যেন এই ধারায় ব্যত্যয় না ঘটান, তারা যেন আমাদের বহু সংস্কৃতির, বর্ণের, বহু জাতির দেশ- এই ঐতিহ্য প্রত্যেকটি ধর্মের, জাতির, উৎসবের বর্ণটা বিচ্ছুরিত হতে দেন। 

তিনি দুর্গাপুরের সম্ভাব্য এম পি ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে হাজংদের এ উৎসব যেন আরও বড় হয়ে উঠে, মান্দিদের উৎসবগুলো আরও বড় হয়ে উঠে। এ অঞ্চল বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান-বিরোধী আন্দোলন থেকে বর্তমান পর্যন্ত একটি সংগ্রামশীল অঞ্চল  হিসেবে পরিচিত। সোমেশ্বরী নদী, গারো পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এ অঞ্চলের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে কৃষিতে অমিত সম্ভাবনা ছিল, এখনো আছে। পর্যটনেও সম্ভাবনা আছে এবং ভবিষ্যতে তা বহুগুণে বাড়তে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত দুুর্গাপুর, কলমাকান্দা আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমাদের দুর্গাপুর, কলমাকান্দা হচ্ছে একটি বাগানের মতো, একটি বাগানে যেমন বিভিন্ন ধরনের ফুল থাকে ঠিক তেমনি এখানে হিন্দু, মুসলিম, গারো, হাজং হলো একেকটা ফুল, সবাই মিলে একটি বাগান। আমি চেষ্টা করছি এ প্রষ্ফুটিত, সুন্দর  বাগানের একজন মালি হতে, এ বাগানের পরিচর্যা করতে। আমি শুধু কথার কথা বলছি না, আমি কথা দিচ্ছি একজন মালি হয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করবো।

অনুষ্ঠানে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বন্ধন বৃদ্ধি, জাতি ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলকে বাংলাদেশি পরিচিত করার প্রয়াসকে স্মরণ করেন এবং হাজং জনগোষ্ঠীর তথা দুর্গাপুর, কলমাকান্দার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে কৃষি ও শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কলকারখানা স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আদিবাসী নেতা মতিলাল হাজং। 

অনুষ্ঠানে দুর্গাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এ্যাডভোকেট এম.এ জিন্নাহ, সংস্কৃতি কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন মুকুল, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য সন্ধ্যা রানী হাজং, বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং, শ্যামনগর গ্রামের প্রতিনি সজল হাজং উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মহিষাসুর বধ পালা মঞ্চায়িত হয়।