দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে তারা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন—বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাসেম–শাহীন) সভাপতি মো. আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন–লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ, সমন্বয়ক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা এবং দেশের বিভিন্ন জেলা–উপজেলা থেকে আগত শত শত সহকারী শিক্ষক।
আন্দোলনকারীরা জানান, সরকারি বিভিন্ন পদে সমমানের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই দশম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন—যেমন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই), নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা। অথচ সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হয়েও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা এখনও ১১তম গ্রেডে রয়েছেন। তাই দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের পর এবার তারা দশম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবিতে আবারও মাঠে নেমেছেন।
তাদের তিন দফা দাবি হলো—
(১) সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ;
(২) ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদানের সমস্যা সমাধান;
(৩) শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো সত্ত্বেও সরকারের আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেয়নি। কয়েক দফা আন্দোলনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৭ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি বাস্তবায়ন না করে তা পাঠিয়ে দেয় নবগঠিত পে-কমিশনে।
দুই মাস কেটে গেলেও কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষক নেতারা পে-কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কমিশন জানায়, গ্রেড পরিবর্তনের এখতিয়ার তাদের নয়, এটি সার্ভিস কমিশনের বিষয়।
এ অবস্থায় শিক্ষকরা আবারও তাদের পুরোনো দাবি অর্থাৎ দশম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়টি সামনে এনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,দাবি আদায়ে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষক শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষকদের সংখ্যা আরও বাড়বে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডের শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি, তাই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
এর আগে গত ১৭ অক্টোবর থেকে শিক্ষকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের একটি অংশ হঠাৎ করে তা স্থগিত করে। পরে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) তারা আবারও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যা শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে।
