বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান বলেছেন, বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।
এছাড়া, বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যটন, সংস্কৃতি ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে মালয়েশিয়া অঙ্গিকারবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এক হোটেলে মালয়েশিয়া ট্যুরিজম ফেয়ার উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক জমকালো নৈশভোজে এ কথা বলেন তিনি।
হাইকমিশনার বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পর্যটন, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক বিকশিত ও বিস্তৃত হয়েছে। নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মাধ্যমে এ অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হচ্ছে।’
শুহাদা ওসমান জানান, আগামী দিনে আরও বেশি বাংলাদেশি পর্যটককে স্বাগত জানাতে চায় মালয়েশিয়া।
তিনি বলেন, পর্যটন হলো এমন এক সেতু, যা খাবার, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমাজকে কাছাকাছি আনে।
শুহাদা ওসমান বলেন, ‘ফেস্টিভ্যাল মালয়েশিয়া’ উদযাপন মালয়েশিয়ার বহুসাংস্কৃতিক ঐক্যের ‘রঙ, স্বাদ ও ছন্দ’ তুলে ধরে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময় দুই দেশের উষ্ণ সম্পর্ককেও আরও দৃঢ় করে।
তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার কুয়ালালামপুর সফরসহ উচ্চ-পর্যায়ের সফরগুলোর কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, এই সফরগুলো পর্যটন, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো খাতগুলোতে সহযোগিতা জোরদারে দুই দেশের সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
হাইকমিশনার মালয়েশিয়ার বৈশ্বিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম সংযুক্ত বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অবস্থান মালয়েশিয়াকে ভ্রমণ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
উপদেষ্টা আবরার ও হাইকমিশনার ওসমান মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ট্যুরিজম মালয়েশিয়া, ম্যাট্রেড, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা-সহ সকল অংশীদারদের উৎসবকে সফলভাবে আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
এর আগে সকালে মালয়েশিয়া ট্যুরিজম ফেয়ার ও ‘ভিজিট মালয়েশিয়া ইয়ার ২০২৬’ প্রচারণা উদ্বোধনকালে হাইকমিশনার ঘোষণা দেন, ২০২৬ সালে ৩ লাখ বাংলাদেশি পর্যটককে আকর্ষণের লক্ষ্য নিয়েছে মালয়েশিয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ‘মালয়েশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন বাজারগুলোর মধ্যে একটি’। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বিঘ্ন ভ্রমণের জন্য সরকারি ই-ভিসা ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার জরুরি।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি পোর্টালের মাধ্যমে সরাসরি ই-ভিসা করলে প্রক্রিয়াটি ‘সহজ ও সুশৃঙ্খল’ হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আবেদন করলে তথ্যের গরমিল হতে পারে, যা জটিলতা এমনকি কালো তালিকাভুক্তিরও কারণ হতে পারে।
তিনি বাংলাদেশি নাগরিকদের কেবল সরকারি ই-ভিসা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করার আহ্বান জানান। এ সাইটের ঠিকানা নিয়মিত হাইকমিশনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তিনি আশ্বাস দেন, প্রয়োজনে হাইকমিশন ভ্রমণকারীদের সহায়তা করবে।
এই মেলায় বিমান সংস্থা, ট্যুর অপারেটর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীসহ মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হল ‘মালয়েশিয়া ট্রুলি এশিয়া - ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬’। প্রচারণাটির লক্ষ্য হলো মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং দুই দেশের মধ্যে পর্যটন ও বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করা।