ইন্টারনেট, ডিস ও টেলিফোন সংযোগসহ পাঁচটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তার দৃশ্যমান থাকবে না। নালা দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের তার যাবে গ্রাহকের বাসাবাড়িতে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ডে ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবহার করে তার সঞ্চালনের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ওয়ার্ডটিতে এপ্রিলের মধ্যেই দৃশ্যমান সব তার অপসারণ করা হবে। এই সংযোগ লাইনে তারের মাধ্যমে যেসব সেবা পাওয়া যায়, সেসব সেবা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে পুরো চট্টগ্রামেই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
এর ফলে সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা স্তূপ করা তারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকেও রেহাই পাবেন নগরবাসী। পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে। গত বছরের ১৪মে নগরীর অক্সিজেন এলাকায় চলন্ত রিকশায় তার পড়ে দগ্ধ হন চালক মো. জাবেদুল। পরে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর ঝুঁকিপূর্ণ তার অপসারণের দাবি উঠে চট্টগ্রামজুড়ে।
তারের জঞ্জাল থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে যুগান্তকরী প্রযুক্তি ব্যবহারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে নগরবাসীর। লালখান বাজারের মতো সারা শহরে সংযোগ স্থাপনের দাবি তাদের।
লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলালের উদ্যোগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ওয়ার্ডটি। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে সুফল পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এটি বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি তারের জঞ্জাল থেকে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে ওয়ার্ডটির মানুষ। শুধুমাত্র অপটিক্যাল ফাইবার ফ্রেম ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক থেকে বাসা বাড়িতে ক্লায়েন্ট ডিস্ট্রিবিউশন ফ্রেমের মাধ্যমে ইন্টারনেটসহ সকল সংযোগ হয়ে উঠবে সহজ ও নিরাপদ।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী প্লেক্সাস নেট লিমিটিডের ব্যবস্থাপনায় পুরো ওয়ার্ডের সুয়ারেজ ডাক্ট ও সিটি করপোরেশনের নালা ব্যবহার করে স্থাপন করা হয়েছে সেমি আন্ডারগ্রাউন্ড এফটিটিএইচ ফাইবার আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
যার ফলে সেবা প্রদানকারীদের তার কিংবা ক্যাবল ওয়ার্ডজুড়ে স্থাপিত ১৯০টি ওডিএফ (অপটিক্যাল ডিস্ট্রিবিউসন ফ্রেম) এর মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে গ্রাহকদের ভবনে স্থাপিত ১৩০০ এর অধিক সিডিএফ (কালেয়ন্ট ড্রিস্ট্রিবিউশন ফ্রেমে)।
যত্রতত্র ঝুলন্ত তার অপসারণের খবরে খুশি স্থানীয়রা। তারা বলছেন, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর স্বমন্বয়হীনতায় প্রায়শই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওয়ার্ডটির নান্দনিক সৌন্দর্য প্রকাশের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে সেবার মান প্রত্যাশা তাদের।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে নিজ ওয়ার্ডকে নান্দনিক ও নিরাপদ করে গড়ে তুলতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল।
তিনি বলেন, ‘স্মার্ট ওয়ার্ডের অংশ হিসেবে নিরাপদ লালখান বাজার গড়ে তোলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে সেমি আন্ডারগ্রাউন্ড এফটিটিএইচ ফাইবার আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক সিস্টেম। নগরীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে নাগরিক ও সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা পাব।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর থেকে সুফল পাওয়া গেলে পুরো শহরে এই সিস্টেম চালু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র। তারের মাধ্যমের যেসব সেবা পাওয়া যায় সবকিছু পাওয়া যাবে এই সিস্টেমে। সব কাজ শেষ করে আগামী মাসেই এই প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি চলছে।’
এদিকে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রথমবারের মত একটি ওয়ার্ডকে ঘিরে স্থাপিত হয়েছে এই সেমি আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ারর্ক- জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
