সোমবার, নভেম্বর ১০, ২০২৫

হিট স্ট্রোকে শিক্ষকসহ প্রাণ গেল ১২ জনের

হিট স্ট্রোকে শিক্ষকসহ প্রাণ গেল ১২ জনের

টানা তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ দেশবাসী। প্রচণ্ড গরমে রাজধানী ঢাকাসহ আট জেলায় হিট স্ট্রোকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একজন শিক্ষকও আছেন। গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালগুলোয় গরমজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, একদিকে তীব্র গরম, অপরদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা বেশি থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। অল্পতেই মানুষ প্রচণ্ড ঘেমে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এরকম তীব্র গরমের সময় সতর্ক না থাকলে শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি হিট স্ট্রোকে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

রোববার নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গণে সুলতান উদ্দিন মিয়া (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। রোববার বেলা ৩টার দিকে তার মুত্যু হয়। তিনি নরসিংদী কোর্টে আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) হিসাবে কর্মরত ছিলেন। স্বজনরা জানান, সুলতান উদ্দিন মিয়া প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে বের হয়ে নরসিংদী কোর্টে যান। কোর্টে কাজ করার সময় দুপুরে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে তিনি আদালতের মসজিদের সামনে এলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লোকজন উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় রোববার তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন নাজিম উদ্দিন (৭০) ও ঈশ্বর চন্দ্র (৬০)। কড়াই গ্রামের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন দুপুর ১টার দিকে জমি থেকে ঘাস কেটে বাসায় আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। অপরদিকে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার রাজবংশীপাড়ার ঈশ্বর চন্দ্র মনিমালা সিনেমা হল এলাকায় তার ভাড়া নেওয়া ধানের চাতালে কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চাতালের অন্য কর্মীরা তাকে বাসায় নিয়ে এলে গ্রামের একজন ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এলাকাবাসীসহ একাধিক সূত্র হিট স্ট্রোকে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।

অপরদিকে যশোরে ধান কেটে বাড়ি আসার পর আহসান হাবিব (৩৭) নামে এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার এ ঘটনা ঘটে। তিনি যশোর সদরের আমদাবাদ হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। স্থানীয়রা বলছেন, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।

এ ছাড়া মাদারীপুরের কালকিনিতে তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক করে শাহাদাত সরদার (৫৯) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শাহাদাত পৌর এলাকার পশ্চিম শিকার মঙ্গলগ্রামের ছালাম সরদারের ছেলে। এলাকা ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী শাহাদাত সরদার রোববার সকালে তীব্র গরমের মধ্যে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তিনি গরম সইতে না পেরে হঠাং অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে কালকিনি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে হিট স্ট্রোকে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে নিজ বাড়িতে নিহত মো. কামরুল হাসান ফাহিম (৭) চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেরামতপুর গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে। সে স্থানীয় মধ্য কেরামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্র ছিল। বিকালে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ফেরদৌস আলম ঠান্ডু (৫০) নামে এক চা বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে বেলুয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি হেমনগর ইউনিয়নে বেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোনতাজ মাস্টারের বড় ছেলে।

রাজশাহীতে দিলীপ বিশ্বাস (৩৫) নামের এক যুবক হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার সকাল ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি পবা উপজেলার দামকুড়া থানার কাদিপুর গ্রামের গোপাল বিশ্বাসের ছেলে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জে হিট স্ট্রোকে রিয়াজ হাওলাদার নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা মারা গেছেন। শনিবার বিকালে কলসকাঠি বাজারে উপজেলা নির্বাচনে এক প্রার্থী পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় অসুস্থ হয়ে হিট স্ট্রোকে তিনি মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। রিয়াজ হাওলাদার কলসকাঠী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। একই এলাকার মজিবর হাওলাদারের ছেলে।